নরওয়ের ফুটবল ক্লাব ব্রাইন এফকে তাদের খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে এক অভিনব রীতি তৈরি করেছে। গত মাসে ম্যাচসেরার পুরস্কার হিসেবে যেখানে দেওয়া হয়েছিল চার ট্রে ডিম এবং চলতি মাসের শুরুতে কয়েক কার্টন দুধ, সেখানে সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে তারা সেরা খেলোয়াড়ের হাতে তুলে দিয়েছে একটি জ্যান্ত ভেড়ার বাচ্চা!
ঘটনাটি ঘটে সোমবার নরওয়ের শীর্ষ লিগ এলিটসেরিয়েনের হেগসুন্দের বিপক্ষে ব্রাইন এফকের ৩-১ গোলের জয়ের ম্যাচে। দলের হয়ে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করা এবং পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ২৭ বছর বয়সী অ্যাক্সেল ক্রাইগার জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। আর পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুটফুটে সাদা এক মেষশাবক। ভেড়া কোলে ক্রাইগারের ছবি ব্রাইন এফকে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার পরেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
কিন্তু কেন এমন অদ্ভুত পুরস্কার দিচ্ছে ক্লাবটি? ব্রাইন এফকে কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা ম্যাচসেরা খেলোয়াড়কে এমন একটি স্মৃতি উপহার দিতে চায় যা তিনি আজীবন মনে রাখবেন এবং যা ভক্ত-সমর্থকদেরও আনন্দ দেবে। এছাড়া এটি বিশ্ব ফুটবলে ক্লাবের একটি অনন্য পরিচিতি গড়ে তোলার প্রয়াস। ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ডের শৈশবের ক্লাব হিসেবে কিছুটা পরিচিতি থাকলেও, ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করতে চায়। তারা মনে করছে, এই ধরনের ব্যতিক্রমী পুরস্কার সহজেই সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং ক্লাবের পরিচিতি বাড়াবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ক্লাবের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে। ব্রাইন শহরটি মূলত কৃষিপ্রধান এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ক্লাবের সমর্থকরাও নিজেদের ‘কৃষক’ পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করেন এবং মাঠে প্রায়ই ‘আমরা কৃষক এবং এ জন্য গর্বিত’ স্লোগান দেন। এমনকি মাঠের পাশে ট্রাক্টরে বসে খেলা দেখার জন্য বিশেষ টিকিটের ব্যবস্থাও আছে। তাই ডিম, দুধ বা ভেড়ার মতো পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে ক্লাবটি তাদের স্থানীয় কৃষি ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও গভীর করতে চাইছে।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্রাইগারের পাওয়া ভেড়াটিকে আপাতত স্থানীয় একটি কসাইখানায় (যার নাম কাকতালীয়ভাবে ‘হলান্ড কিওত’) প্রক্রিয়াজাত করে খামারে ফেরত পাঠানো হবে। গ্রীষ্মকাল জুড়ে ভেড়াটি রাইফিলকের মনোরম চারণভূমিতে বিচরণ করবে এবং দর্শকদের আনন্দ দিতে ও ক্রাইগারের সঙ্গে দেখা করাতে মাঝে মাঝে ব্রাইন স্টেডিয়ামেও আনা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী শরতের শেষ দিকে ভেড়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাইগারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খুলনা গেজেট/জেএম